স্বপন কুমার ঢালী, বেতাগী থেকে : বরগুনার বেতাগীতে চলমান কঠোর লকডাউন আরও এক সপ্তাহ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গাভী পালনকারী ও খামারে দুধ উৎপাদনকারীরা। তাঁরা কম দামে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের লোকসান আরও বেড়ে গেছে। ফলে তাঁরা কঠোর লকডাউনের সময় বিপাকে রয়েছে। সরকারি বিধিনিষেধের ফলে মিষ্টির দোকান বন্ধ ও বাজারগুলোতে লোকজনের আনাগোনা না থাকায় গাভী পালনকারী ও খামারিদের থেকে দুধ কেনা কমিয়ে দেওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চাহিদার অভাবে অনেক গাভী পালনকারী বাড়ি বাড়ি গিয়ে উৎপাদিত দুধ এবং কোনো কোনো খামারি প্রত্যন্ত এলাকায় ভ্যানে দুধ নিয়ে গ্রামে গ্রামে কম দরে ফেরি করে বিক্রি করছেন।
জানা গেছে, এমনই একজন পৌর শহরের টাউন ব্রিজে বসা উপজেলার কেওড়াবুনিয়া গ্রামের গাভী পালনকারী দুধ বিক্রেতা মো. তাজেম আলী বলেন, ‘ লকডাউনের কারণে দুধের দাম কমে গেছে। সকাল থেকে বসে আছি এখনো ক্রেতা পাচ্ছিনা। ৬০-৭০ টাকা লিটারের দুধ বিক্রি করছেন ৩০-৪০ টাকা দরে। কখনো কখনো আরও কম দামে।’উপজেলার আরও একাধিক খামারিরা জানান, বর্তমানে দুধ বিক্রি করে তাদের লোকসান হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিস¤পদ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, স্থানীয় ঘি, ছানা, মিষ্টি ও চায়ের দোকান গুলোতেও প্রচুর দুধ প্রয়োজন হয়। তাই এ এলাকার খামারে ও ব্যক্তি পর্যায়ে গাভী পালনকারীদের যে পরিমাণ দুধ উৎপাদিত হয়ে থাকে তা মিষ্টির ও চায়ের দোকানি এবং স্থানীয় অন্যান্য ক্রেতাদের মাঝে বাজারজাত করে থাকে।
তাছাড়াও স্থানীয় কিছু দুধ ব্যবসায়ী নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এ উপজেলা সহ ও তার আশে-পাশেও বিভিন্ন এলাকায় পাঠিয়ে থাকেন। কিন্ত কঠোর লকডাউনে এসব কারখানা ও মিষ্টির দোকানগুলো বন্ধ থাকায় তাদের দুধ সংগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারি ও গাভী পালনকারীরা। গ্রামের অনেকেই রয়েছেন যারা শখ করে দু একটা গাভী পালন করে সদস্যদের দুধের চাহিদা মিটিয়ে দুধ বিক্রি করে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসারের যাবতীয় খরচ মেটানো হয়। গাভী পালনে এসব ব্যক্তিদের বাজার থেকে নিয়মিত গো-খাদ্য কিনতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে তাঁরা চরম বিপাকে রয়েছেন। উপজেলা ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. নাসির উদ্দিন পিযুষ বলেন, করোনা মহামারিতে দুধ ক্রয়কারি প্রতিষ্ঠানসসমূহ বন্ধ রয়েছে ও ব্যক্তিগতভাবেও স্থানীয় মানুষের দুধ ক্রয়ের পরিমান কমে যাওয়ায় আমার মত দুধ উৎপাদনকারী অনেককেই চরম বিপাকে পড়তে হয়। তবে ইতোমধ্যে এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে আমাদের প্রচেষ্টায় স্থানীয় প্রশাসন মিষ্টির দোকাগুলো খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুল্লাহ জানান, এখানে দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা নেই। তাই একটা চরম সংকট তেরি হলেও আশার কথা মানবিক বিচেনায় উপজেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠক করে বৃহ¯পতিবার থেকে স্থানীয়ভাবে দুধ ক্রয়কারী অন্তত মিষ্টির দোকানগুলো খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি এর পর আর দুধ বিক্রয়কারীদের কোন সমস্যায় পড়তে হবে না।’ তবে দুঃখজনক হলেও বাস্তবসত্য পৌর শহর এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ভাগে কিছু প্রতিষ্ঠান দোকান খুললেও দোকানে কোন ক্রেতা না থাকায় হতাশ হয়ে দুপুর না গড়াতেই দোকানগুলো বন্ধ করে যার যার গন্তব্যে ফিরে যায়। একাধিক দোকানিরা প্রশ্ন করেন, ক্রেতা নেই তাই কি আর করার ?
Leave a Reply