এম.এস রিয়াদ : প্রতিবন্ধী মোঃ যসীম (৩০)। ১৯৯০ সালে বরগুনা সদর উপজেলাধীন ২ নং গৌরিচন্না ইউনিয়নের ছোট বদরখালীতে মৎস্যজীবী মোঃ ইসমাইলের ঘরে জন্ম নেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে যসীমের টাইফয়েড জর হয়। এতে বিছানালগ্ন হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য বহু চেষ্টা করা হলেও আর উঠে দাঁড়াতে পাড়েনি যসীম। ২০০৩ সালে পিতৃবিয়োগে এক অকাল মেঘের ছায়ায় ঢেকে যায় যসীমের পরিবার। বাবার রোজগারের টাকায় কয়েক মাস সংসার চললেও ভিক্ষার থালা হাতে নিয়ে নামতে হয় যসীমকে। সংসারে মা ছাড়া ছোট এক ভাই রয়েছে; নাম ওয়াসীম। যে শারীরিকভাবে ভালো থাকলেও বৈবাহিক কারণে থাকেন আলাদা।
যসীমের সাথে এখন শুধু মা নয়, ২০১৮ সালে যুক্ত হয়েছে স্ত্রী রুশিয়া। যে একসময় ভিক্ষে করত। সংসার বাঁধায় এখন তাতেই মননিবেশ হয়েছেন তিনি। দৈনিক ২৫০ থেকে ৩০০ কিংবা কিছু বেশি পেলেও করোনায় পাচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা ভিক্ষা। সমাজসেবা থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা পান প্রতি ৬ মাস অন্তর ৪৫০০ টাকা। যেখানে একটি পরিবারের মাসে কমপক্ষে ৫০০০ টাকার প্রয়োজন হয়ে থাকে। ভিক্ষা ও প্রতিবন্ধী ভাতার এ টাকায় চলছে সংসার। মাস শেষে গুনতে হয় লাকুরতলার সোনালী পাড়ায় বাবুল ডাক্তারের ভাড়া বাসার ৮০০ টাকা। অথচ প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারের ঘর জোটেনি এই প্রতিবন্ধী যসীমের। করোনার এমন দুঃসময়ে বাড়ির বাহিরে নামতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও যসীম প্রতিদিন ভিক্ষের থালা নিয়ে ট্রাফিক মোড় জিরো পয়েন্টে মাছ বাজার ব্রীজে না বসলে জুটবেনা ভাতের চাল। জুটবেনা খাবারের টাকা। ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা মোবাইল কোর্টের নাম শুনলেই হাতের থালাটা কোলে নিয়ে হুইল চেয়ারের চাকা ঠেলে কোথাও পালাতে চেষ্টা করেন যসীম। অথচ খেতে না পাড়া যসীমের এ ভয় সমাজের লজ্জা ছাড়া আর কিছুই নয়। হাটতে না পাড়া এই যসীম আজ অসহায় হয়ে বসে থাকেন কিছু টাকার জন্য। কোন কথা বলেন না তিনি। শুধু হুইল চেয়ারে বসে একবার ডানে, একবার বাম দিকে তাকান। কেউ হেটে গেলে শুধু ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকেন কিছু পাবার আশায়। ভোটের অধিকার অর্জন করলেও করেনি একটি ঘরের অধিকার। খোঁজ না নেয়ায় চোখের আড়ালেই রয়ে গেলো প্রতিবন্ধী যসীম। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ভোটারের খোঁজে যসীমের দারস্ত হলেও হয়নি তার প্রয়োজনে। যসীম লেখাপড়া না জানা একজন মানুষ। ফলে সরকারি ঘর পেতে কী করতে হয় তাও তার জানার কথা নয়। সহযোগিতার আশ্বাসটুকুও জোটেনি কারোর থেকে। হয়তো যসীমের জীবন এভাবেই ভিক্ষার থালা নিয়ে কাটবে; চলবে সংসারও।
তবে আমাদের ব্যর্থতায় কমবেনা একজন ভিক্ষুক, একজন প্রতিবন্ধী ও একজন অসহায় মানুষ। যদি কোনদিন জেলা প্রশাসনের কোন কর্তাব্যক্তিদের নজরে আসেন তবে তাকে যসীম বলবে তার মনের সকল দুঃখ। বলবে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার আশ্রায়ন প্রকল্পে একটি ঘর না পাওয়ার কথা। ঘরটি জুটলে হয়ত কিছু সাশ্রয় হত যসীমের। স্থায়ী একটি ঠিকানাও হত। কতদিন চলেবে ভিক্ষা করে ভাড়া বাসায়? কতদিন চলবে এভাবে একটি সংসার? যসীমের এমন তথ্য পেয়ে পারিবারিক বিষয়ে জানতে গেলে কেবল একটি কথা দিয়েই শুরু করেন তার ব্যক্ততা। কথাটি হল- ল্যাকপেন? প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেতে পারবেন? বলেছিলাম- পরবো কিনা জানিনা। তবে আপনার কথা ও আপনার অসহায়ত্বের খবরটুকু জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছে দিবো।
Leave a Reply