সিনিয়র রিপোর্টার : বরগুনা সদর উপজেলার ৫নং আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নের খেজুরতলা গ্রামের মৃত মুজাফ্ফর এর বড় ছেলে মোঃ মনিরুজ্জামান জুয়েলের স্ত্রী মোসাঃ অনিতা জামান শাশুরি আলেয়া বেগমের দেয়া দুই মামলায় শিশু দুই সন্তান নিয়ে দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে। বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২০ জুন করা প্রথম মামলায় আলেয়ার নিজের দুই সন্তানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা (ওয়ারেন্ট) জারি করা হয়। প্রথম মামলাটিতে মোসাঃ অনিতার বিরুদ্ধে সমন জারি হলেও একই আদালতে ৩০ জুন করা দ্বিতীয় মামলায় ওয়ারেন্ট জারি করা হয়। সমন জারি করা হয়েছে ১৩ বছরের নাতি আলিফ ও ছোট পুত্রবধু ইভার বিরুদ্ধে। মিথ্যা মামালা করা হয়েছে বলে অভিযোগ নিয়ে সাংবাদিকদের স্মরণাপন্ন হলে বিষয়টি সরেজমিনে অনুসন্ধানে নামে একদল সংবাদকর্মী। শাশুরী ও পুত্রবধুর সাথে ঝামেলা খুব একটা নতুন নয়। পুত্রবধুদের চাওয়াটা একটু জালাময়ী হয়। সেই সাথে শাশুরিদের দোষের অভাব থাকেনা। এমনটাও স্বাভাবিক। আদালত, থানা, হাসাপাতাল, সাংবাদিকদের কাছে শত্রু আসলেও তার সকল ধরণের সহযোগিতা করা দায়িত্ব বলেই আলেয়ার পুত্রবধু অনিতার করা অভিযোগটি যেমন আদালত আমলে নিয়েছেন; তেমনি সংবাদকর্মীরাও বিষয়টি আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে ঘটনাস্থলে গিয়ে অনিতার বিরুদ্ধে করা মামলার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিডিও সাক্ষাতকারে আলেয়ার স্বামী মৃত মুজাফফরের বড় দুই ভাই হোসেন আলী, আবুল কাশেম, মরিয়ম ও প্রত্যক্ষদর্শী জান্নাতুল ফেরদৌস জানান বছরে দুইবার আসেন আলেয়ার দুই ছেলে জুয়েল, সোয়াইব ও পুত্রবধুরা। এই প্রথমবার দীর্ঘদিন বাড়িতে থেকে গেলেন বড় পুত্রবধু অনিতা জামান। এর কারণ শশুর মুজাফফরের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দোয়া ও মোনাজাত করিয়েছেন। হঠাৎ করেই পুত্রবধুর থাকার বিষয়টি শাশুরি আলেয়ার ভালো লাগেনি। এরও একটি কারণ রয়েছে। ননদ মোসাঃ মনিরা আক্তার একাধিক সংসার ভেঙ্গে থাকছেন বাবার বাড়িতে। তবুও পিতার অবর্তমানে দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই জুয়েল সংসারের যাবতীয় ঘানি টেনে থাকেন। এমনকি জমিজমা ও বসতভিটায় ঘর তুলে ডিভোর্সী বোনকেও দিনের পর দিন খাওয়াচ্ছেন।
এরই মধ্যে গোপনে বোন মনিরা একটি বিয়ে করেন। যা মা আলেয়া একাই জানতেন। রাতের আধাঁরে আসতেন এবং কুসুম আলোয় চলে যেতেন। পুত্রবধু অনিতা এবার বাড়িতে থাকায় গোপনে করা বিয়ের মেয়ে জামাই ঘরে আসা বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে পুত্রবধু ও কয়েকজন ভাসুর বিষয়টি সমাধানে বসেন এবং মেয়ে জামাইয়ের প্রতি মাসের বাজার খরচ দিয়ে হলেও শশুর বাড়িতে পাঠাতে চেয়েছেন মনিরাকে। কিন্তু শাশুরী আলেয়া চেয়েছেন মেয়ে ও মেয়ে জামাই ঘরেই থাকবেন। থাকবেন না পুত্র ও পুত্রবধুরা। সাধারণত রক্তের সম্পর্কটা শক্ত হয়। কিন্তু এখানে পুরোটাই উল্টো। কারণ কোন ব্যক্তি মিথ্যের আশ্রয় নিতে চাচ্ছেন না। তাই পুত্রবধুর পক্ষেই পাওয়া গেলো ঘটনার বিবরণ। একের পর এক অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে যাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে পুত্রবধুকে মারধর করে উল্টো মামলা করেন শাশুরি আলেয়া। এমনটাই পুত্রবধুর ভাষ্য। আলেয়ার ছেলে জুয়েল ও সোয়াইব দুই ভাই থাকেন ঢাকায় এবং পেরাইভেট চাকরি করেন। রয়েছে দাপ্তরিক উপস্থিতির প্রমান। অথচ মারধরের মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। বড় ছেলের বড় সন্তান আলিফ। তাকেও করা হয়েছে চার নম্বর আসামী। বয়স দেয়া হয়েছে ১৮ বছর। জুয়েল ও অনিতা দম্পতির বিয়ে হয় ২০০৭ সালের ২৮ জানুয়ারী। এরপরই ২০০৮ সালের ১৪ মে জন্ম নেয় প্রথম সন্তান। তাতে বয়স আসে ১৩ বছর ১ মাস ১৭ দিন। যে ছেলেটি শহুরে পরিবেশে আদরে বড় হওয়া। যার মোলায়েম স্বভাবে মারামারি করার মতো কোন ছাপ পাওয়া যাবে বলে মনে হয়নি।
অথচ শিশু নাতির বিরুদ্ধেও করা হল মামলা। আদালত তার বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন। একই মামলায় দুলাল নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধেও করা হয়েছে সমন জারি। বাদ যায়নি ছোট পুত্রবধুও। যার কোলে মাত্র ৮ মাসের একটি সন্তান রয়েছে। রয়েছে তিন বছরের আরেকটি সন্তান।
অনুসন্ধানে গিয়ে উপস্থিত সকলেই সন্তান, পুত্রবধু ও নাতিদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলাকে নিন্দা জানিয়ে বিজ্ঞ আদালতের সহযোগিতা কামনা করেন। দুটি মামলায় একই সাক্ষী করা ১১ জন ব্যক্তির মধ্যে দেলোয়ার ও পান্না মৃধা নামের দুই ব্যক্তির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তারা মামলা সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন। যা মোবাইল রেকর্ডে ধারণ করা আছে। স্থানীয়রা জানান আলেয়ার মেয়ে একাধিক বিয়ের পরে আবার বিয়ে করেছেন। যা একেবারে গোপনীয় ছিলো। এটা সামাজিক একটি সমস্যা ছিলো বিধায় এ নিয়ে ঘরোয়া সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে শশুর বাড়ি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় এবং দুই মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়। সেই সাথে জামাই অস্বচ্ছল হলে প্রতিমাসে দেয়া হবে বাজার খরচ। এমন সিদ্ধান্ত ভালো লাগেনি আলেয়ার। এরই জের ধরে এমন ঘটনা ঘটিয়ে উল্টো পুত্রবধু, ছেলে ও নাতীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তবে বিজ্ঞ আদালতের সুদৃষ্টি এবং সঠিক তদন্ত করলে এর মূল রহস্য বেড়িয়ে আসবে। সমাধান হবে দায়ের করা মিথ্যা মামলার রহস্য। অনিতা খোলা হাওয়ায় শান্তির আসমান জুড়ে স্বামী-সন্তানের সাথে শাশুরী আলেয়াকে নিয়েই থাকতে চান জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। দৃষ্টি এখন বিজ্ঞ আদালতের দিকে। সঠিক বিচারের আশায় বুক বেঁধে দাঁডিয়ে আছেন সন্তান, পুত্রবধু ও শিশু নাতি আলিফ।
Leave a Reply