স্বপন কুমার ঢালী, বেতাগী : ‘কষ্ট হচ্ছে। এখন আর গাড়ি চালাতে পারমু না। খুব খিদা পাইছে। বাড়ি যাইয়া দুপুরের ভাত খামু। খাওয়ার পর বিক্যালে বের অইয়া রাইত ১০ টা পর্যন্ত কাজ করতে পারমু। মোরোও আপনাগো মতন পড়ালেখ্যা করতে ইচ্ছা করছিলো কিন্তু পরিবারে ট্যাহা পয়সা না থাকোনে করতে পারলাম না।’ এ বাস্তব কথাগুলো অতি কষ্টের সাথে বলছিল, বেতাগী পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ব্যাটারি চালিত গাড়ি (ইজি বাইক) চালক আসলাম হাওলাদার। বয়স ২৮ বছর। সকাল ৬ থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যাটারি চালিত গাড়ি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে। বিনয়ী স্বভাবের মিষ্টভাষী ও সদালাপী আসলাম উপার্জিত অর্থ দিয়ে মা, স্ত্রী ও ২ মেয়েসহ পরিবারের ৫ সদস্যের জীবিকা নির্ভর করছে। জানা গেছে, আসলামের বাবার নাম হানিফ হাওলাদার এবং মা ফুলবানু বেগম। হানিফ হাওলাদার দিনমজুরের কাজ করতো। ২০০৮ সালের ১৩ নভেম্বর হানিফ হাওলাদার মারা যায়। বাবা-মায়ের ৬ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে আসলাম ৫ম। জন্মের ২ বছরের সময় পোলিও হয়ে ডান পা ও হাত বেঁকে যায়। অর্থাভাবে উন্নতি চিকিৎসা করতে পারেনি। এরপর থেকে হয়ে যায় শারীরিক প্রতিবন্ধী। হাঁটতে পারে না এবং ডান হাত দিয়ে ভালোভাবে ধরতেও পারে না। তবে বসতে পারে এবং সবার সাথে ভালোভাবে কথা বলতে পারে। কিন্তু জীবিকার টানে থেমে নেই আসলাম। ওর বয়স যখন ১২ বছর তখন থেকে চা, পান , বিস্কুট ও সিগারেট বিক্রি করতো বেতাগী বাসস্ট্যান্ডে একটি ছোট দোকান ঘর নিয়ে। এভাবে ১৪ বছর যাবত দোকান দিয়েছে। গাড়িতে করে পরিবারের সদস্যরা বা বাড়ির কেউ দোকানে এসে বসিয়ে দিয়ে যেতো। প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকার কিস্তিতে গত ২ বছর পূর্বে স্থানীয় ব্রাক এনজিও থেকে ৬০ হাজার টাকা ঋণ নেয় এবং বড় ভাই মনির কিছু টাকা দিয়ে সহযোগিতা করে । এরপর ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে ব্যাটারি চালিত স্বয়ংক্রিয় গাড়ি কিনে নেয়। বেতাগী পৌরসভার বিভিন্ন রুটে গাড়ি চালায়। শারীরিক সমস্যার কারণে তাঁর কোন ভাই বা বাড়ির কেউ গাড়িতে উঠিয়ে দেয়। এরপর গাড়িতে উঠলে সে ভালোভাবে গাড়ি চালাতে পারে। আসলাম জানায়,গাড়ি চালিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এখন ভালোভাবে আছে। ৬ বছর পূর্বে সুমা বেগম (২৪)কে বিবাহ করে। পরিবারের মা, এলামা (৫) ও সেতু (৩) নামে ২ টি মেয়ে রয়েছে।’ আসলাম সর্ম্পকে শিক্ষক ও সাংবাদিক আকন্দ শফিকুল ইসলাম বলেন,‘ আসলাম সদালাপী, কখনো রাগ হয় না এবং সবার সাথে মিষ্ট ভাষায় কথা বলে। আমরা সকলে ওর ব্যবহারে মুগ্ধ।’ পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. মিজানুর রহমান মন্টু বলেন,‘ আসলামকে প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ডে নাম অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে পৌরসভার দরিদ্র তহবিল থেকে তাকে সহযোগিতা করা হবে।’ বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্ত রবীন্দ্রনাথ সরকার বলেন‘, ওর যখন ৩ বছর বছর বয়স ওই সময়টা ভালোভাবে চিকিৎসা করাতে পারলে প্রতিবন্ধী হতো না। এখন আর সুযোগ নেই।’ আসলাম জানায়,‘ সমাজসেবা অফিস থেকে মাসে ৭ শত ৫০ ট্যাহা পাই। কিন্তু মোরো একটা গাড়ি দিলে ঋণের কোন ঝামেলা অইতো না।’ এ বিষয় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহীনুর রহমান বলেন,‘ আমরা তাকে ভাতার ব্যাবস্থা করেছি। এ বিষয় কোন বরাদ্দ হলে পূর্নসহযোগিতা করা হবে।’
Leave a Reply