স্বপন কুমার ঢালী , বেতাগী (বরগুনা): উপকূলীয় জনপদ বরগুনার বেতাগীতে এ বছর সুপারির বাম্পার ফলন হয়েছে। এ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সুপারির ফলন ভালো হয়েছে । দ্রব্য মূল্যের বর্তমান দাম অনুযায়ী বাজারদর কম থাকায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন এখানকার বেতাগীর কৃষক, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ১ টি পৌরসভা ও ৭ টি ইউনিয়নের ছোট-বড় মিলিয়ে বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা ও বাগানে প্রায় ৮ হেক্টর জমিতে সুপারির বাগান রয়েছে। এ বছর এসব বাগানের সব গাছেই সুপারি ধরেছে।
বাগান মালিকরা জানান, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সুপারি গাছে ফুল আসে। সেই ফুল থেকে সৃষ্টি হয় সুপারি, যা কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে পুরোপুরি পেকে যায়। আশ্বিন মাসের শেষ দিকে বাজারে সুপারি আসতে শুরু করে। মূলত কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসেই সুপারির ভরা মৌসুম। এখন উপজেলার প্রতিটা বাজারে প্রচুর পরিমাণে বিক্রির জন্য সুপারি আসছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা এই সুপারি কিনে ৬০ শতাংশ পানিভর্তি পাত্রে ভিজিয়ে রাখেন। ৪০ শতাংশ সুপারি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবারাহ ও রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়। এ বছর কাঁচা-পাকা সুপারির দাম কম হওয়ায় হতাশ , কৃষক, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
বেতাগী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক আব্দুর রহমান ও কৃষ্ণকান্ত ঘরামী জানায়,’ বর্তমান বাজার মূল্যে অনুযায়ী সুপারির দাম কিছুটা কম। এ বছর আশ্বিন মাসের প্রথম দিকে দাম ভালো ছিল কিন্তু কার্তিক মাসের শুরু থেকেই দাম কমে গেছে।’
উপজেলার পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোতে সুপারি বিক্রির প্রধান বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বেতাগী পৌর শহরের বাজার, ঝোপখালী বাজার, পুটিয়াখালী, রানীপুর, গড়িয়াবুনিয়া, বিবিচিনি, লক্ষ্মীপুরা, দেশান্তরকাঠী, বাসন্ডা, হোসনাবাদ, জলিশা, মোকামিয়া, সোনার বাংলা, কাজিরহাট, বলইবুনিয়া, কাউনিয়া, চান্দখালী, মিরেরহাট, কুমড়াখালী, সড়িষামুড়িসহ উপজেলার ৪০ টির বেশি বিভিন্ন হাট-বাজারে চলছে সুপারি কেনা-বেচার জমজমাট ব্যবসা। এসব বাজার থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কিনে পাইকারী ও আড়তদারদের নিকট বিক্রি করছেন। এছাড়াও এ মৌসুমে দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এসে তাদের চাহিদামত স্থাণীয় পাইকারদের কাছ থেকে সুপারি কিনে নিচ্ছেন। এসব বাজারে ১ কুড়ি সুপারি ২২০ টাকা, মানভেদে ২২৫ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভালো সুপারি ৩ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছরের চেয়ে ৫০ থেকে ৮০ টাকা কম বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কৃষক, গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি বিক্রেতারা জানান, তাঁরা এসব গ্রামের বাজারগুলো থেকে সুপারি কিনে ঢাকা, বরিশাল ও খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আড়তদারদের নিকট বিক্রি করেন।
বেতাগী পৌরসভার বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ভূদেব সমাদ্দার বলেন, ‘এ বছর সুপারির ভালো ফলন হলেও গত বছরের তুলনায় বাজারে দাম কম।’
অপর ব্যবসায়ী কার্তিক চন্দ্র হাওলাদার জানান, ‘এই উপজেলায় প্রায় ৮ হেক্টর জমি ও গৃহস্থদের বাড়ির আঙিনায় সুপারির বাগান রয়েছে। এ বছর বিভিন্ন গৃহস্থদের বাগানবাড়িতে সুপারীর বাম্পার ফলন হলেও বাজারে দাম কম থাকায় হতাশ গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এ বছর উপজেলার সুপারি বাগানের মালিকরা সঠিক সময়ে সঠিক পরিচর্যা করায় সুপারির এমন ফলন হয়েছে। বাজারে কাঁচা-পাকা সুপারীর দাম না থাকায় গৃহস্থ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কিছুটা শঙ্কায় রয়েছেন। ‘
Leave a Reply