স্বপন কুমার ঢালী, বেতাগী: বরগুনার বেতাগীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী, জ্বর-সর্দি ও ডায়রিয়ার মতো উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: রবীন্দ্র নাথ সরকার কাজ করে যাচ্ছেন। করোনায় আক্রান্তদের দেখভালের পাশাপাশি মেডিসিন ওয়ার্ডের নিয়মিত চিকিৎসা এবং হাসাপতালের অন্য সহকর্মীদের পরামর্শ ও সহযোগিতা করছেন তিনি। জীবনের ঝুকি নিয়ে ৩ মাসের বেশি সময় ধরে একটানা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন এই সম্মুখযোদ্ধা। বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইতোমধ্যে একজন চিকিৎসক, একজন স্বাস্থ্য সহকারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং সুস্থ হয়েছেন। এ সময় এ সম্মুখযোদ্ধা ভয় পায়নি,বরং নির্ভয় এ উপজেলার জনসাধরণের স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছেন অনবরত। জানা গেছে, রোগীদের মানসিক শক্তি ও সাহস জোগাতে কাউন্সেলিং করছেন তিনি। হাসপাতালের বাইরে নিজের অর্থে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে করোনার উপসর্গ নিয়ে হোমকরোন্টাইনে থাকা লোকদেরও দোরগোড়ায় গিয়ে সেবা দিচ্ছেন এ চিকিৎসক।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, এ জনপদে গত ১৮ মার্চ করোনার প্রাদুভার্ব শুরু হওয়ার পর থেকে আইসোলেশন ওয়ার্ডের দায়িত্ব অর্পিত হয় তার উপর। সেই থেকে উপকূলীয় এ জনপদে করোনায় চিকিৎসক,স্বাস্থ্যসহকারী ও পুলিশ সহ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৭ জন আক্রান্ত হলেও এর মধ্যে ১জনের মৃত্যু হয়। ৩৩৩ জনকে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক করোন্টাইন এবং আইসোলেশনে রাখা হয়। নমুনা পরীক্ষায় করা হয় ২৫২ জনের । করোনার ভেতরেই গত ২০ এপ্রিল থেকে হঠাৎ করে ডায়রিয়ার মহামারী আকারে ধারন করে ৫ জনের মৃত্যু ঘটে। সরকারি হিসেবে ৭৮০ জন ডায়েরীয়ার প্রকোপে আক্রান্ত হয়। এই সময়টায় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি সেবা দেন।
তার পরিবারে রয়েছে মা,বাবা,স্ত্রী. একমাত্র ছেলে, বোন ৩ জন থকেন বাহিরে। বৃদ্ধ বাবা ডায়াবেটিসে আর মা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হওয়ায় তাদের দেখভালের দায়িত্ব তার উপর। দেশের দুর্যোগে পরিবারের কথা ভেবে নিজেকে গুটিয়ে রাখেতে মন সায় দেয়নি তার। মানুষ মারাগেলেও করোনায় খোদ হাসপাতালের এক চিৎিসক আক্রান্ত হওয়ার পর আতঙ্কের কারনে ভয়ে এ হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক রোগীকে সেবা দিতে চাননি। এমন অভিযোগের মাঝেও ডা: রবীন্দ্র নাথ সরকার ভয় না করে সাহসের সাথে এগিয়ে চলেন তিনি। চিকিৎসকের দায়িত্ব কর্তব্য হিসেবে টিএইচ ও সিভিল সার্জনের দিক নিদের্শনায় রোগীকে উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। রোগীরাও ভয়ে হাসপাতালে না আসতে চাইলেও জরুরি সেবার রোগীদের বুঝিয়ে তাদের হাসপাতাল মুখী করছেন। এর আগে তিনি দুর্গম পাহাড়ী জনপদ বান্দরবনের রুমা উপজেলয় কর্মরত ছিলেন। সেখান থেকে গত ২৬ ডিসেম্বর এখানে যোগদান করেন।
একান্ত সাক্ষাতকারে ডা: রবীন্দ্র নাথ সরকার বলেন, ‘মানুষের জীবনটাই বড়। তাকেই আমি প্রধান্য দিতে চাই। কাজকে আমি কষ্ট মনে না করে ইনজয় করি। তাই রোগীর জীবন বাঁচাতে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে আমি সর্বদা প্রস্তত।’
Leave a Reply