স্বপন কুমার ঢালী, বেতাগী (বরগুনা): উপকূলীয় জনপদের বরগুনার বেতাগীর বিষখালী, পায়রা ও সুগন্ধা নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে উপজেলার কৃষক, জেলে ও শ্রমিকদের মাঝে শুরু হয়েছে চাই দিয়ে মাছ ধরার ব্যস্ততা। এ উপজেলায় সাপ্তাহিক হাটের দিন শনিবার ও বুধবারে জমে ওঠেছে চাই কেনাবেচার হাট।
বেতাগী উপজেলায় বর্ষামৌসুমে দেশীয় মাছ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। এ উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ২টি নদী এবং ১৩ টি খাল । বর্ষা এলেই এ উপজেলার গ্রামের মানুষ চাই, বুছনা ও চড়গড়া, পোলো ( এ এলাকার মাছ ধরার আঞ্চলিক বিশেষ নাম) দিয়ে মাছ ধরার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন । বেতাগী পৌরসভার সাপ্তাহিক হাট শনিবার ও বুধবার এবং ইউনিয়নগুলোতেও সাপ্তাহিক হাটের দিন মাছ ধরার জন্য তৈরি উপকরণ চাই বুছনা,পলো,চড়গড়া ইত্যাদি বিক্রির ধুম পড়ে। ফলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলে বর্ষামৌসুমে এসব মাছ ধরার এসব উপকরণ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বেতাগী পৌরসভার সাপ্তাহিক হাটের দিন জমজমাট হাট বসে। এ উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং পাশ্বর্বতী উপজেলা কাঁঠালিয়া ও মির্জাগঞ্জ থেকেও ক্রেতা-বিক্রেতারা আসেন। সপ্তাহের প্রতি শনিবার ও বুধবার উপজেলার পৌরসভার বাজারে বসে চাই, বুছনার হাট। কারিকররা ভ্যানবোঝাই করে হাটে বিক্রির জন্য এসব উপকরণ নিয়ে আসেন। দূরদূরান্ত থেকে মৎস্য শিকারীরা এসব মাছ ধরার এসব উপকরণগুলো কিনতে আসে এখানে। জিনিসের মান বুঝে চাই প্রতিজোড়া সাড়ে ৩০০ শত থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা বিক্রি হয়।
সরেজমিনে গতকাল শনিবার (১৩ জুন) বেতাগী পৌরসভার হাট ঘুরে দেখা যায়, এ উপজেলার ,কেওড়াবুনিয়া, ঝোপখালী, লক্ষ্মীপুরা, ভোলানাথপুর, বিবিচিনি, মোকামিয়া, বাসন্ডা, রানীপুর, গড়িয়াবুনিয়া, পুটিয়াখালী, হোসনাবাদ, জলিসা, কাজিরাবাদ, কুমড়াখালী, জোয়াড়করুনা, বটতলা মির্জাগঞ্জ উপজেলার আমড়াগাছিয়া, পুলের হাট এবং কাঁঠালিয়া উপজেলার শৌলজালিয়া, সোনার বাংলা, রঘুয়ার চর, কচুয়াসহ বিভিন্ন এলাকার বিক্রেতারা তাদের তৈরি চাই, বুছনা, চড়গড়া ও পলো বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছে এ হাটে। সেগুলো দেশের বিভিন্ন জায়গার জেলে ও পাইকাররা ক্রয় করছে।
জানা যায়, বর্ষামৌসুমে মাছ ধরার উপকরণ চাই, বুছনা, চড়গড়া ও পলো তৈরির সাথে জড়িয়ে রয়েছে কয়েক আট শতাধিক পরিবারের ১০ হাজার লোকের জীবন-জীবিকা।
চাই বিক্রি করতে আসা বেতাগী সদর ইউনিয়নের বাসন্ডা গ্রামের বাবুল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘প্রতিটি চাই, বুছনা বানাতে (তৈরিতে) যা খরচ হয় তা বিক্রি করলে ভালোই লাভ হয়। একজন কারিগর সারা দিনে তিন থেকে পাঁচটি চাই বানাতে পারে। গত বছরের চেয়ে এ বছর বেচাকেনা ভালো হচ্ছে দামও একটু বেশি পাচ্ছি।’
চাই ও বুছনার হাটে ক্রয় করতে আসা শাহাজাহান মোল্লা বলেন, ‘ চাই ও বুছনাা পাতলে চিংড়ি, বোয়াল, আইর, বাইম, বাইল্যে টেংড়াসহ বিভিন্ন রকমের দেশি মাছ ধরা পরে। পরিশ্রমও কম। একবার চাই ও বুছনা পেতে প্রতিদিন সকালে দেখতে হয় মাছ পরেছে কি না। তা ছাড়া বাজারে এসব উপকরণ দিয়ে দেশীয় ধরা মাছের চাহিদাও থাকে বেশি। ‘
এ এলাকার মানুষ জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবন ও ভাদ্র এ চার মাস এসব মাছ ধরার উপকরণ বিক্রি হচ্ছে এবং মাছ ধরছে।
Leave a Reply