চীনের উহান প্রদেশ থেকে উৎপাদিত নভেল করোনা (কোভিড-১৯) বিশ্বের প্রতিটি মানুষের পথ চলাকে অবরুদ্ধ করে দিয়েছে। কমে গেছে পৃথিবী চলার গতি পথ। আজ তাই শান্ত পুরো বিশ্ব। প্রতিটি দেশের রাষ্ট্র প্রধানরা নিজের দেশ ও দেশের মানুষের স্বাস্থ সুরক্ষার পাশাপাশি এমন মহামারি থেকে পরিত্রাণের লক্ষে প্রায় গৃহবন্দী করে দিতে বাধ্য করেছে এই করোনা। যেহেতু এই রোগটি ছোঁয়াচে, সেহেতু শারীরিক ও পারস্পারিক দুরত্ব বজায় রেখেই চলতে হবে পথ। ঘরে বসে গুনতে হবে দিন। বিভিন্ন নিয়ম ও স্বাস্থ বার্তাকে করতে হবে সিন। তবে এমন গণনা যদি শুরু থেকেই করা যেতো!
তাই সমাজের কিছু সচেতন মহল ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যখন এই মহামারি করোনা চীনে শুরু হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিস্তার লাভ করতেছিলো, ঠিক তখনই বাংলাদেশ সচেতন হয়ে যদি আকাশপথ, রেলপথ, জলপথসহ বিভিন্ন যাতায়াতের রুট বন্ধ করে দিয়ে প্রথমবারেই এক সপ্তাহর জন্য দেশের অভ্যন্তরিন রুট এবং বাজার খোলা রেখে ক্রয়-বিক্রয় ও নিজ পরিবার পর্যন্ত পৌঁছানোর সময় দিয়ে দেশের প্রতিটি জেলা লকডাউন করা যেতো, তাহলে করোনা নামক এমন মহামারির বিস্তার থেকে স্বল্প হলেও রক্ষা পেতো দেশ ও জাতি। কিন্তু হঠাৎ করে সবকিছু বন্ধ হওয়ায় লাভতো দুর; লসের হিসেব গুণতে হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানকে। এর মধ্যে রয়েছে কাপড়, স্টেশনারী, লাইব্রেরী, চা, মিষ্টিসহ অসংখ্য ছোট্ট ছোট্ট দোকান। অন্যদিকে ঘরে থেকে কপাল চাপ্রাচ্ছেন রিক্সাওলা, রেন্ট-এ-কার, ভ্যান চালক, খেয়ার মাঝীমাল্লারা।
বেলা যখন নিমোজ্জিত হতে থাকে, তখন আঁলোর আশা করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত! আঠার হাজার মাকলুকত এর মধ্যে সৃষ্টিকর্তার এই করোনা জীবানুও একটি। তবে সচেতন হয়ে অগ্রসর হওয়াটাই শ্রেয়। যা কিনা বিশ্বের সকল চিকিৎসা গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের অভিমত। যুদ্ধ করা যায় সমানে সমান। যেখানে কোটি কোটি পিঁপড়া রয়েছে। যা আজ পর্যন্ত মেরে ফেলেও চিনি অথবা মিষ্টি জাতীয় সকল প্রকার দ্রব্যের গন্ধ পেলেই হাজির হতে দেখা গেছে। তাই যুদ্ধ করে নয়, বরং সচেতন হয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাসই হতে পারে এমন ভয়াবহ মহামারি থেকে পরিত্রাণের উপায়।
কিন্তু আমাদের স্বভাবই বলে দিচ্ছে, আমরা কতটুকু সাফল্য অর্জণ করতে পারব!
বাংলাদেশকে দেখে মনে হচ্ছে ত্রাণ দেয়া-নেয়াই করোনার মূল চিন্তা-চেতনা। অথচ, যারা ত্রাণের পিছনে ছুটছেন, তাদের সবার কি এখনই ত্রাণ দরকার? আমরা ত্রাণের সাথে সাথে করোনা ভাইরাসের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করছি নাতো? তাই ঘরে থাকুন। চিকিৎসক, পুলিশ, প্রশাসনসহ এই সময়ে এগিয়ে আসা স্বেচ্ছাসেবকদের বাঁচতে দিন। তারা ঝুঁকি নিচ্ছেন ঠিক ;কিন্তু তারাও আমাদের মতোই মানুষ।
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, দুস্থ ভাতা চালু আছে। এর বাইরে যারা আছেন তাদের কমবেশি আয়-বাণিজ্য ছিলো। অল্প কিছু মানুষের খাদ্যাভাব আছে। কিন্তু শিল্পপতি থেকে হতদরিদ্র সবার মধ্যে এখনই হাহাকার শুরু হয়ে গেল! করোনা প্রতিরোধের একটাই উপায়। তা হল ঘরে থাকা। কিন্তু যে হারে মানুষ ত্রাণ, দান, অনুদান, প্রনোদনা খুঁজছে; তাতে মানুষের লোভী চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। লোভীদের আল্লাহ্ ক্ষমা করবেন কিনা, জানিনা। হে আল্লাহ্, মানুষের বিবেক জাগ্রত করে দাও। স্রেফ ডাল- ভাত-আলু খেয়ে কী কিছুদিন কাটানো যায় না? উপজেলা, জেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে যারা ত্রাণের জন্য লাইন দিচ্ছেন, তাদের ৮০ শতাংশের ঘরে চাল, ডাল, তেল আছে!
তবুও কিছু মানুষের এমনও অবস্থা হচ্ছে। যারা কিনা হাত পেতে কিংবা চেয়ে নিতেও কুন্ঠিতবোধ করে থাকেন। এমন সব মধ্যবিত্ত্ব পরিবারগুলো সত্যিই অসহায়ত্বের দ্বাড় প্রান্তে অবস্থান করছেন। কথায় আছে বসে খেলে রাজার গোলাও খালি হয়। করোনা শুরু থেকে হঠাৎ করে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে অনেকেই। এরমধ্যে ব্যবসায়ীক দ্রব্যাদি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় লচ গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন। এমন অবস্থা কাটিয়ে উঠতে কতটা সময় নিবে, তা অনিশ্চয়তার পরিপূরক।
এত মানুষের আজ ক্ষতি; সাধনা করলে হয়তোবা ক্ষতিগুলো পূরণ হতে পারে। তবে জীবনের ক্ষতি হলে, কি হতে পারে, তা কি একটিবারও ভেবে দেখেছেন? তাই আজ থেকেই শপথ নেই- নিজের ক্ষতি করবনা-অন্যকে কষ্ট দিবোনা। স্বাস্থ বার্তা মেনে চলি, অতি দ্রুত দেশ ও দেশের মানুষের ক্ষতি উত্রে উঠি। তাই আসুন সকলে আমরা আইন ও স্বাস্থ বিধি মেনে চলি। একটু সচেতন হলেই দেশ ও জাতি রক্ষা পেতে পারে এমন ভয়াবহ করোনার হাত থেকে।
লেখকঃ এম.এস রিয়াদ
সাহিত্য-সম্পাদক ও
সিঃ স্টাফ রিপোর্টার
দৈনিক দ্বীপাঞ্চল।
Leave a Reply