এম.এস রিয়াদঃ চীনের উহান অঞ্চল থেকে নোভেল করোনা (কোভিড-১৯) এর ভয়াল গ্রাসে গোটা বিশ্ব মুচরে অবস্থায়। যে পরিস্থিতি সামাল দিতে গোটা বিশ্ব হিমসিম খাচ্ছে। এর ভয়াবহ রুপ ধারণের পরপরই বাংলাদেশ সরকার দেশের মানুষের স্বাস্থ সুরক্ষার কথা চিন্তা করে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। স্বাস্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিনিয়ত দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট ব্রিফিং এর মাধ্যমে মানুষকে জানিয়ে সচেতন করার চেষ্টা করছে। সেই সাথে করোনা থেকে রক্ষা পেতে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরে থাকা, উষ্ণ গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করা, সাবান দিয়ে বেশিবেশি হাত ধোয়া, মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাবস্ ব্যবহারসহ বিভিন্ন ধরণের নির্দেশনা দিচ্ছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। এরই ধারাবাহিকতায় বরগুনার মানুষের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে সামাজিক দুরত্ব ও শারিরিক স্পর্শ বজায় রাখতে গত ১৮ এপ্রিল বরগুনা জেলাকে লকডাউন ঘোষণা দিয়েছেন বরগুনা জেলা প্রশাসন।
বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি আইন শৃংখলা রক্ষা করতে সর্বদা মাঠে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন নির্বাহী ম্যাজিস্টেটরা। সেই সাথে পুলিশ, র্যাব, নৌবাহীনি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি বরগুনা ইউনিটের একটি টিম খাদ্য চাহিদা মেটাতে প্রতিটি বাজারে নিরাপদ দুরত্বতা বজায় রাখতে সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছেন সাধারণ মানুষদের।
তবে ইতোমধ্যে বরগুনায় করোনা থেকে রক্ষা পেতে ঘরে থাকা কর্মহীন ব্যাক্তি তথা পরিবারকে সরকারের তরফ থেকে দেয়া খাদ্য সামগ্রী জেলা প্রশাসন প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন।
জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মহামারি ও জাতির এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে সরকারের দেয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত ৭৬ হাজার ৪ শ’ ৫০ পরিবারকে ৮ শ’ ৮ মেট্রিক টন খাদ্য সহায়তা ও ৭৮ হাজার ৫০ পরিবারকে ৪৬ লক্ষ ৬২ হাজার ৫ শ’ নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। দুই শ’ মেট্রিক টন খাদ্য ও সাত লক্ষ টাকা মজুদ রয়েছে। বর্তমানে বরগুনা জেলায় এ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
অন্যদিকে করোনা থেকে রক্ষা কবজ হিসেবে সরকারিভাবে পার্সোনাল প্রটেক্টিভ ইকুভমেন্ট (পিপিই) ৩ হাজার ৪শ’ ৬৯ ও মাস্ক ৪ হাজার ৮শ’ ২০ টি বিতরণ করা হয়েছে। পিপিই ৪ হাজার ২ শ’ ৭১ ও মাস্ক ২ হাজার ২ শ’ ৮০ টি মজুদ রয়েছে। তবে বেসরকারিভাবে কেবলমাত্র পিপিই মজুদ রয়েছে মাত্র ২২ টি।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বরগুনায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা মোট ১০ জন। বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে ৩শ’ ৩৪ জন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ২শ’ ৬৯ ও আইসোলেসনে ৮ জন। এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন/আইসোলেসন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে ৪শ’৭২ জন। করোনা আক্রান্ত ব্যাক্তিদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ২ জন। পুলিশ সুপার কার্যালয়ের জেলা বিশেষ শাখার (এসবি) প্রতিবেদন অনুযায়ী- ১ মার্চ ২০২০ থেকে বিদেশ প্রত্যাগত ৯ শ’ আশি এবং ঠিকানা ও অবস্থান চিহ্নিত বিদেশ প্রত্যাগত ব্যক্তি ৮শ’ ৮০ জন।
কোভিড-১৯ চিকিৎসার জন্য বরগুনা জেলায় সরকারিভাবে চিকিৎসাকেন্দ্র রয়েছে ৭ টি। যাতে মোট বেডের সংখ্যা ৩শ’ ২০ টি। এরমধ্যে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় প্রস্তুতকৃত বেড রয়েছে ত্রিশটি। এতে ডাক্তার সংখ্যা পঁচাত্তর ও ডিপ্লোমাধারী নার্সের সংখ্যা ১শ’ ২১ জন। তবে বেসরকারিভাবে চিকিৎসাকেন্দ্র ১৫ টি। এতে মোট বেড সংখ্যা ১ শ’ ৫০ টি। কোভিড-১৯ চিকিৎসায় প্রস্তুতকৃত বেড সংখ্যা ১২ টি থাকলেও চিকিৎসক ও নার্স নেই এসকল বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যাক্তির জরুরী চিকিৎসায় স্থানান্তরের নিমিত্তে পৃথক এ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা মাত্র১ টি। অপরদিকে চিকিৎসাকেন্দ্রের জরুরী বিভাগের আইসোলেসন ব্যবস্থা ৪২ বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
করোনা প্রতিরোধে বরগুনার কার্যক্রম সম্পর্কে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, বরগুনা জেলার সর্বস্তরের জনগণের প্রতি সরকারি নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকার অনুরোধ জানাই। সেই সাথে খাদ্য সামগ্রী প্রয়োজন হলে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হট লাইন ( 01733314535) নম্বরে একটি কল দিলেই আমরা ঘরে পৌঁছে দিবো। সকলকে সচেতন থেকে প্রশাসনকে সহযোগিতা করারও আহ্বান জানান তিনি।
Leave a Reply