স্টাফ রিপোর্টার: ’৭১ এর রনাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ.করিম স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ার আবেদন করেছেন। তিনি সম্প্রতি মুক্তিযোদ্বা হিসেবে বিভিন্ন দালিলিক প্রমানপত্রসহ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী বরাবরে এক লিখিত আবেদন করেন। আবেদন পত্রের আলোকে তিনি এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, তার বাড়ী বরগুনা জেলার পাথরঘাটা থানার কাকচিড়া ইউনিয়নের জালিয়াঘাটা গ্রামে। মুক্তি যুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ২২ বছর। তিনি ১৯৬৩ থেকে ’৬৮ সন পর্যন্ত বরিশাল বি.এম কলেজে লেখাপড়া করেন। এ সময়ে ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে তৎকালীন ভিপি (সাবেক মন্ত্রী) আমির হোসেন আমুর নেতৃত্বে তৎকালীন সরকার বিরোধী সকল আন্দোলনে ভূমিকা রেখে দ্বায়ীত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৮ সনে বি.এম কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করে, নিজ এলাকায় একটি হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ১৯৭১ সনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আহবানে সারা দিয়ে দেশ-মাতৃকার টানে নিজ এলাকায় সংগ্রাম পরিষদ ও স্থানীয় যুব সমাজকে নিয়ে মুক্তি বাহিনী গঠন করেন। এক পর্যায়ে ৯নং সেক্টর কমান্ডার এম.এ জলিলের নির্দেশে ক্যাপ্টেন মেহেদী আলী ইমামের নেতৃত্বে বুকাবনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত মুক্তি বাহিনীর সাব সেন্টারে যোগ দিয়ে অস্ত্রহাতে পাক বাহিনী, রাজাকার ও শান্তি কমিটির মোকাবেলা করেন। এরই মধ্যে পাক সেনারা পাথরঘাটা থানার ৯/১০ জন মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে। ওই তালিকায় তার নাম থাকায় রাজাকাররা তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। এ সময়ে তিনি সহযোদ্ধাদের পরামর্শে নিজ এলাকা ছেড়ে ছদ্মবেশে ঢাকা হয়ে সিলেটের বাহুবল থানায় তার এক বন্ধুর বাড়ীতে আশ্রয় গ্রহন করেন। সেখানে ৩নং সেক্টর কমান্ডার মেজর কে.এম.শফিউল্লাহর নেতৃত্বে বাহুবল থানা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ জালাল উদ্দিনের অধীনে মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিয়ে তার সাথে থেকে দেশ স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দেশে ফিরে এসে বন মন্ত্রনালয়ের অধীনে একটি সরকারী চাকুরীতে যোগদান করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন “আমি স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি এটাই আমার গর্ব। সনদ সংগ্রহের উপর আমি কখনো গুরুত্ব দেইনি। ১৯৮৫ সনে সরকার মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্ত/কর্মচারীদের ২টি অগ্রীম ইনক্রিমেন্ট দেয়ার সুযোগ দিলে আমি যেখানে যার সাথে যুদ্ধ করেছিলাম সেই বাহুবল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের কমান্ডার মোঃ জালাল উদ্দিনের নিকট থেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ সংগ্রহ করি এবং সেই সনদের আলোকে অফিস থেকে আমাকে দু’টি ইনক্রিমেন্ট প্রদান করা হয়।
কেন আপনি রাষ্ট্রীয় ভাবে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে পরবর্তীতে আবেদন বা চেষ্টা করেননি? এ প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযোদ্ধা এম.এ.করিম বলেন “ পরবর্তী সময়ে মিস ফাইলিংয়ের কারনে আমার মুক্তিযোদ্ধা সনদ পত্রখানা হারিয়ে যায়। দীর্ঘ্য ৩২ বছর পর অনেক খোজাখুজি করে সম্প্রতি সময়ে সনদপত্র খানা পেয়ে সকল প্রমানাদিসহ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃতি পেতে আবেদন করেছি। দেশ প্রেমিক এলাকাবাসী আমাকে স্বীকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেখতে চায়। তাই তৎকালীন প্রত্যক্ষদর্শীরা (বর্তমান প্রবীনরা) আমাকে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রত্যয়ন করেছেন।” প্রসংগক্রমে তিনি বলেন “আমার ব্যর্থতার কারনেই আমি আবেদন করতে পারিনি ফলে স্বীকৃতিও পাইনি। এখন আমি অবসর জীবন যাপন করছি। মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাড়িয়ে কোন ব্যক্তিস্বার্থেনয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সেই ভয়াবহ স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা স্মরনে, দেশমাতৃকার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মৃত্যুর পূর্ব মূহুর্তে হলেও আমি আমার অবদানের স্বীকৃতি চাই। আপনারা আমাকে সহযোগিতা করুন।”
সাংবাদিক সম্মেলনে তার দেয়া বক্তব্য এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় বরাবরে দেয়া আবেদনের আলোকে তার নিজ এলাকায় তথ্যানুসন্ধানে গেলে এলাকার বয়বৃদ্ধ অনেকেই বলেছেন মুক্তিযোদ্ধা করিম একজন ভাল মানুষ, সে ওই সময় মুক্তিযুদ্ধ করেছে। তার গুলির অর্ডার হয়েছিল ইত্যাদি।
Leave a Reply