স্বপন কুমার ঢালী, বেতাগী : এক খেয়েছে বুলবুলেতে এহন আবার অসময় বইষায় মোগো পাকা ধানে মই দিয়া গেল। কয়েকটা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ,ধারদেনা করে জমি চাষ করি । ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে মোগো বেশ কিছু জমির আমন ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয় এহন আবার অসময় বইষার কারণে মাঠের পাকা ধানগুলো পড়ে গেছে, বৃষ্টিতে ধান ক্ষেতে পানি জমে গেছে মোরা এহন কিস্তি বা দিমু ক্যামনে আর ধারদেনা দিমু ক্যামনে। এ কথাগুলো হতাশ হয়ে বলছিল উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ষার্টোব্ধ ( ষাট বছরের অধিক বয়স্ক কৃষক) কৃষক পনু হাওলাদার। তিনি গতকাল (২৭ ডিসেম্বর) সকালে তাঁর মাঠের আমন ধানগুলো পরে যাওয়ায় হতাশ হয়ে কেঁদে ফেলেন। অসময় বৃষ্টির কারণে মাঠের পাকা আমন ধানগুলো শুয়ে পরায় উপজেলার এক তৃতীয়াংশ আমন ধানের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ৯ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে বিষখালী নদীর তীরবর্তী বেতাগী উপজেলায় আমন ধান ও রবি ফসল খেতের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। এতে কৃষকের কোমর ভেঙ্গে গেছে ও ফসল কম হওয়ার এবং ধানগুলো শুয়ে পরায় পুরোপুরি ঘরে না তুলতে পারার আশঙ্কায় কৃষক চিন্তিত হয়ে পড়েছে। উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রোপা আমন আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৭০২ হেক্টর,যার ২.৩৮ শতাংশ বিনষ্ট হয়েছে। ধনিয়া ৩ হেক্টরের ক্ষতি ৮০ শতাংশ, মরিচ ০.৫ হেক্টরের ৮০ শতাংশ,শীতকালীন শাক-সবজি ১২০ হেক্টরের ৬১.২৫ শতাংশ, আখ ৫ হেক্টরের ২৪ শতাংশ,খেশারি ৫ শত হেক্টরের ৮০ শতাংশ, পান ১৪০ হেক্টরের ১৩.৫০ শতাংশ ও কলা ৫০ হেক্টরের ২০ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। উত্তর ছোট মোকামিয়া গ্রামের কৃষক মোঃ মধু মিয়া জানান, ‘৫৫ একর জমিতে মৌলতা, দুধ কলম, কালিজিরা ও দেশীয় ধান জাতের আবাদ করেছিলাম, বর্তমানে অসময় বৃষ্টির কারণে মাঠে ধানগুলো পড়ে গেছে এবং এ ফসল ঘরে না তোলার উপক্রম হয়েছে।’ সদর ইউনিয়নের ঝিলবুনিয়া গ্রামের কৃষক মোঃ জামাল মোল্লা বলেন, ঘূর্ণিঝড় তাদের কোমর ভেঙ্গে দিয়েছে। তিনি ৭ শতাংশ জমিতে বেগুন, করলা, ধনিয়া ও মরিচের বীজ বুনেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকালে প্রর্বল বর্ষণে মাঠের ধান পরে গেছে। হোসনাবাদ ইউনিয়নের জলিশা গ্রামের কৃষানী মোসাঃ রেহেনা বেগম বলেন,‘ মাঠের ধান পেকে গেছে আর এক সপ্তাহের মধ্যে কেঁটে ঘরে তোলা যেত কিš‘ বর্ষণের কারণে ধানগুলো মাঠে শুয়ে পরেছে এযেন প্রকৃতি মই দিয়েছে। ফলে কাংক্ষিত ফলন তো দূরের কথা পুরো ধান বাড়িতে তুলতে পারবো না।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন,‘ বৃষ্টিতে ধানগুলো পরেছে এটা সত্য, কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিষয়টি ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।’
Leave a Reply